ছেলের সঙ্গে বাবাও পাস
গত বছরও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শিবগঞ্জ এলাকার ৪০ বছর বয়সী ভ্যানচালক জিন্নত আলী। কিন্তু তিনি পাস করতে পারেননি। কষ্ট পেলেও হতাশ না হয়ে এবারও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিল তাঁর বড় ছেলে শরীফুল। গতকাল সোমবার ফল ঘোষণার পর দেখা গেল বাবা-ছেলে দুজনই পাস। তবে বিশেষ করে জিন্নত আলীর পাসের খবরে খুশির উচ্ছ্বাস বয়ে যায় গোটা স্কুলসহ এলাকায়।
ছেলের সঙ্গে বাবাও পাস
পড়াশোনা শুরু করার সময়টা সম্পর্কে জিন্নত আলী বলেন, তিনি উপজেলা সদর থেকে এলাকার স্কুলে ভ্যানযোগে বই আনা-নেওয়া করতেন। বই দেখে তাঁর শুধু মনে হতো, এগুলো পড়তে পারলে কী মজাই না হতো! এর আগে তিনি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে পড়েছিলেন। কিন্তু তখন পড়াশোনা আর এগোয়নি। জিন্নত আলী নিজের এমন ইচ্ছার কথা জানান প্রতিবেশী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ওরফে গোলাপ মাস্টারকে। গোলাপ মাস্টার ভ্যানচালক জিন্নত আলীর আগ্রহ দেখে তাঁকে ক্লাস ওয়ানের কয়েকটি বই দেন পড়ার জন্য। ২০০৮ সালের কথা এটি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময়ে সময়ে গোলাপ মাস্টার তাঁকে পড়াতেন। এরপর একদিন শিবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আফরোজাকে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছিলেন জিন্নত আলী। ম্যাডামও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে জিন্নত আলীকে স্কুলে ভর্তি হতে বলেন। জিন্নত আলী শিবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ম্যাডাম তাঁকে বইপত্রও দেন। এর পর থেকে প্রতিবছর পরীক্ষা দিয়ে জিন্নত আলী ওপরের ক্লাসে উঠতে থাকেন। গত বছর জিন্নত আলী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু তিনি পাস করতে পারেননি। এ ব্যাপারে জিন্নত আলী বলেন, 'আমি অঙ্কে খারাপ করেছিলাম।'
পড়াশোনার ব্যাপারে জিন্নত আলী বলেন, 'আমি সব সময় স্কুলে যাইবার পারতাম না। আবার গেলেও সবডা সময় কেলাসে থাকবার পারতাম না। কিন্তু যখন ভ্যান চালাইতাম আর মাল বইতাম, তখন সুযোগ পাইলেই বই পড়তাম। একটু লেহালেহিও করতাম। আমার পড়াশুনা দেইখ্যা অনেক মানুষই কইছে, তুমি থাইম না।' জিন্নত আলী বলেন, 'আমি এত কষ্ট করে পড়াশুনা করেছি। আমি মনে করি, যে কেউ ইচ্ছা করলেই পড়াশুনা করতে পারে।' ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে জিন্নত আলী বলেন, কয়েকটি অক্ষর শিখলেই মানুষ টিপসইয়ের বদলে স্বাক্ষর দিতে পারে। তিনি চান মানুষ যেন আর টিপসই না দেয়। নিজের ছেলেমেয়ে সম্পর্কে জিন্নত আলী বলেন, বড় ছেলে শরীফুল তাঁর সঙ্গেই পাস করেছে। তবে ছেলের নম্বর তাঁর চেয়ে বেশি। ছোট অন্য ছেলেটি প্রথম শ্রেণীতে এবং একমাত্র মেয়ে শিশু শ্রেণীতে পড়ে।
জিন্নত আলীর নিজ স্কুল ফুলবাড়িয়ার শিবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধবী সাহা বলেন, 'জিন্নত প্রমাণ করল, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। বয়স হলেও শিক্ষায় কোনো লজ্জা নেই। ফুলবাড়িয়ার জিন্নত আলী এখন এক জীবন্ত উদাহরণ।'
0 comments
Write Down Your Responses